শিক্ষকের মৃত্যু : কুয়েট ছাত্রলীগ সম্পাদকসহ ৪ ছাত্র আজীবন বহিষ্কার

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগ কুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ চার শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজীবন বহিষ্কার হওয়া অন্য তিনজন হলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আব্দুল কাইয়ুম, মো. কামরুজ্জামান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজ খান নিলয়। এ ছাড়া আরো ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৭৯তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। বেলা ১১টায় সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভুঁঞা কালের কণ্ঠকে জানান, অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা ৪৪ শিক্ষার্থীকেই বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। সাতজনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার এবং হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তাহমিদুল হক ইশরাক ও মাহমুদুল হাসান, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাদমান সাকিব ও এ এস এম রাগিব আহসান মুন্না, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের মাহিন মুনতাসির ও মীর জামির রহমান এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রুদ্র নীল শুভ।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আনিকুর রহমানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার এবং হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ২২ জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা স্থগিত করে রাখা হয়েছে। তাঁরা ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি আরো ১০ জনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এক বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত অথচ এখন স্থগিত হওয়া ২২ শিক্ষার্থী হলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফয়সাল আহমেদ রিফাত, মানিক কুমার সরকার ও মো. আমিনুল ইসলাম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ইমরান হোসেন আওয়াল ও মো. সাদিকুল ইসলম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. খালিদ সাইফুল্লাহ শুভ্র, মো. সাব্বির জোয়ারদার, মো. মাহববুর রহমান (রাফি), মো. আতিকুর রহমান, নাজমুস সাকিব সিফাত, মো. গোলাম কিবরিয়া, সাগর তরফদার, প্রান্ত কর্মকার ও সাফায়েত মাহবুব, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. ফাইয়াজ রহমান, ওসমান ফারুক ও মো. মুহিব্বীন হোসেন সরদার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নূর মোহম্মদ ও মো, আনোয়ার হোসেন সাকিব, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. নাইমুর রহমান অন্তু, সাফাত হাসান ও মো. ইমতিয়াজ আহমেদ।

অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে, ছাত্রলীগ কুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ কয়েকজন ছাত্র তাঁদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করেন। তাঁরা ওই শিক্ষককে তাঁর ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) যেতে বাধ্য করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তাঁরা আনুমানিক আধাঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর শিক্ষক সেলিম বিধ্বস্ত অবস্থায় দুপুরে খাবার খেতে ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাসায় যান। বিকেল ৩টার দিকে স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।