‘অবন্তিকাকে ছাদে বা ফাঁকা ক্লাসরুমে নিয়ে যেতে চাইতেন আম্মান’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে রাস্তায় চলাফেরার সময় কিংবা বিভাগের করিডরে একা থাকলে ছাদে বা ফাঁকা ক্লাসরুমে নিয়ে যেতে চাইতেন আম্মান সিদ্দিকী। গত বছরের ১৪ নভেম্বর আম্মানের উত্যক্তের ঘটনা লিখিতভাবে প্রক্টর অফিসকে জানিয়েছিলেন অবন্তিকা। আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জমা দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

অভিযোগপত্রে অবন্তিকা জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বাবা মারা যাওয়ার পর আম্মান তার ওপর আরও বেশি নিপীড়ন শুরু করেন। করতেন বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল মন্তব্যও। প্রতিবাদ করলে ফাঁসানোসহ নানা হুমকি দিতেন।

তবে নিপীড়ন ও উত্যক্তের শুরুটা হয়েছিল আম্মানের প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। অভিযোগপত্রটি থেকে জানা যায়, প্রথম বর্ষে পড়ার সময় তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন আম্মান। অবন্তিকা তাতে রাজি হননি। এর পর থেকেই আম্মান উত্ত্যক্ত ও হয়রানি শুরু করেন। হুমকি দেন, তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন, যাতে অবন্তিকাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।

২০২২ সাল থেকে আম্মানের নিপীড়নের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। রাস্তায় চলাফেরার সময় , বিভাগের করিডরে একা থাকলে আম্মান তাকে ছাদে বা ফাঁকা ক্লাসরুমে নিয়ে যেতে চাইতেন। মেসেঞ্জারে তথ্য ছড়িয়ে অবন্তিকাকে অপদস্থ করার হুমকিও দিতেন। প্রতিবাদ করলে নিপীড়ন আরও বেড়ে যেত।

অবন্তিকা তার অভিযোগে আরও বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বাবা মারা যাওয়ার পর আম্মান আরও বেশি নিপীড়ন শুরু করেন। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে আম্মান হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার নামে প্রক্টর স্যারের কাছে নালিশ দিবি? দে, দেখি কী করতে পারস। প্রক্টর স্যারকে একটা কল দিলেই স্যার ধরেন; কারণ, আমি সাংবাদিক।’ আম্মান আরও বলেন, ‘তুই জানস কোতোয়ালি থানায়ও আমার কেমন লিংক? এক সেকেন্ড লাগবে তোকে ফাঁসাতে’।

এর আগে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট কোতয়ালী থানায় একটি জিডি করেছিলেন অবন্তিকা। সেখানে ফেসবুকের ফেক আইডি থেকে তার নামে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে ফাইরুজ নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।