মেয়ের বিয়ে দিতে এসে লঞ্চে নিখোঁজ মা-বাবা-ভাই

শনিবার ছিল বড় মেয়ে হাফসার বিয়ের দিন। বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে আগেভাগেই ঢাকা থেকে স্ত্রী পাখি বেগম ও আড়াই বছরের ছোট ছেলে নাসরুল্লাহকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন আব্দুল হাকিম। তার বাড়ি বরগুনা সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে।

কিন্তু হাফসার বিয়ে আর হলো না। তার আগেই অভিযান-১০ ট্র্যাজেডিতে বাবা-মা-ছোট ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শরীফ বাড়িতে আজ বিয়ের আনন্দের বদলে কান্নার রোল পড়েছে।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঝালকাঠি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জানা গেল হাফসার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার করুণ গল্প। খবর শুনে হাফসার দাদি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর তার বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের লাশ খুঁজতে এসেছেন নানি ফরিদা বেগম, চাচা আব্দুল মোতালেব শরীফ ও চাচাত চাচা ছত্তার শরীফ।

কিছুক্ষণ পর পর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ফরিদা বেগম। বলছিলেন, শনিবার নাতনির বিয়ার দিন তারিখ ধার্য ছিল। তাতো হইলো না। এহন মাইয়া-জামাই আর ছোট নাতির লাশটা পাই কি না জানি না।

তিনি বলেন, বেন বেলা থেইকা আইয়্যা বইয়্যা রইছি, কিন্তু কিছুই পাইলাম না। জানি না কি নিয়া ফিরমু। লাশগুলা পাইলেও অন্তত মনডারে বুঝাইতে পারমু।

ফরিদা বেগম বলেন, আমার আর কিছু লাগবে না। মাইয়া-জামাই আর নাতির কবরটা দেওয়ার ব্যবস্থা একটু করে দেন।

নিখোঁজ আব্দুল হাকিম শরীফের বড় ভাই আব্দুল মোতালেব শরীফ বলেন, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে খুব ছোট একটা পদে চাকরি করতেন আব্দুল হাকিম। বড় মেয়ে হাফসা আমাদের ওখানে থেকেই লেখাপড়া করত। আর ছোট ছেলে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন হাকিম। পরিবারের দেখাশুনায় হাফসার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ছেলে বায়িং হাইজে চাকরি করে। শনিবার বিয়ের জন্য সব আয়োজন আমরা শেষ করে রেখেছি। হাকিমও বলেছিল, আমরা যেন সব গুছিয়ে রাখি। সে এসে অনুষ্ঠানাদি শেষ করে আবার চলে যাবে। ছুটি পায়নি। কিন্তু চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে হাকিম।

তিনি বলেন, এখন কেমনে বাঁচবে হাফসা, আর কেমনে থাকব আমরা। বুঝতেছি না। যারা পুড়ে গেছে তাদের দেখেও চেনার উপায় নেই। অন্তত লাশগুলো বুঝে পেলেও মনরে বুঝাতে পারতাম।

আরেক চাচাত ভাই আব্দুস ছত্তার শরীফ বলেন, হাফসাকে বলে এসেছি তোমার মা-বাবা-ভাইয়ের কিছুই হয়নি। কিন্তু এখন এসে দেখছি লাশ নিয়েও ফিরতে পারব না।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লঞ্চটি রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।