১৪’শ বছর আগের ঘটনা জানাবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য জানার আগ্রহ মানবজাতির দীর্ঘদিনের। সেই আগ্রহ মেটানোর লক্ষ্যে অবশেষে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হলো বহুল আলোচিত জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এর মাধ্যমে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সময়কার নানা তথ্য জানা যাবে। অর্থাৎ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ১৪০০ কোটি বছর পেছনে যাওয়ার সুযোগ দেবে সর্বাধুনিক এ মহাকাশ টেলিস্কোপ।

 

২৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গায়ানাতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির লঞ্চপ্যাড উৎক্ষেপণ করা হয় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপ লঞ্চের কথা ছিল ২০০৭ সালে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর সেই স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির হাজার কোটি ডলারের ফসল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি যার খরচ ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ২০ কোটি ডলার, তা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১০০০ কোটি ডলার। প্রকল্পের নকশা থেকে শুরু করে মহাকাশ যাত্রার মাঝে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নিয়ে প্রায় ৩০ বছর পরিশ্রম করেছেন বিজ্ঞানীরা।

২৯ দিন পরে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ পৌঁছবে পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। সেখানে থেকে পাঠাবে তথ্য। বর্তমানে মহাকাশে কর্মরত হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরী হিসেবে পাঠানো হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। মহাকাশে ৩১ বছর কাটানো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ জীবন সীমার শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ হাবলের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বড় এবং ১০০গুণ বেশি শক্তিশালী।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ পাঠানোর উদ্দেশ্য

পৃথিবীর প্রথমাবস্থায় নক্ষত্র, ছায়াপথ কেমন ছিল, সেসব তথ্য জানাবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার চারটি ক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে সর্বাধুনিক এই টেলিস্কোপ।

 

  1. প্রাথমিকভাবে আলোর উৎস। সৌরজগৎ সম্পর্কে প্রচলিত সব ধারণা ভুলে গিয়ে নতুন করে আরও গভীরে গিয়ে একাধিক খুঁটিনাটি তথ্য।
  2. সৌরজগতের বাইরের বিভিন্ন গ্রহ (এক্সোপ্ল্যানেট) সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা।
  3. এই মহাবিশ্ব কী ভাবে গঠিত হয়েছে, তা বুঝতে সাহায্য করবে।
  4. সৌরজগতের বাইরের সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহগুলোর বিস্তারিত বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।

 

মহাকাশে যেভাবে কাজ করবে এ টেলিস্কোপ

ইনফ্রারেড বা অবলোহিত স্পেকট্রামে কাজ করবে এই টেলিস্কোপ, যে অবজেক্টের উপরে এটি ফোকাস করবে, সেখান থেকেই ইনফ্রারেড লাইট সংগ্রহ করবে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটিকে অন্যান্য টেলিস্কোপের তুলনায় আরও কার্যকরভাবে সময় মতো একাধিক মূল্যবান জিনিস দেখতে সাহায্য করবে। এটি বিজ্ঞানীদের নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডল দেখতেও সাহায্য করবে, যা সাধারণত ধূলা এবং গ্যাস দ্বারা আবৃত থাকে। ইনফ্রারেড আলো সহজেই এই ধরনের মহাজাগতিক ধূলিকণা এবং গ্যাস ভেদ করতে পারে।