ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে চট্টগ্রামে গোলটেবিল আলোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুমোদিত ৪ হাজার ৩১২টি ইবতেদায়ি মাদরাসাসহ তালিকাভুক্ত সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির আদেশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সকল বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গোলটোবিল আলোচনা করেছে ইবতেদায়ি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগ। এসময় বক্তারা ইবতেদায়ি অতিসত্বর জাতীয়করণ কার্যকর করার জোর দাবি জানান।
শনিবার (২৫ মে) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম নগরীর প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় আগামী ৩০ শে জুনের মধ্যে ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করণ না করা হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
বক্তারা বলেন, ইবতেদায়ি মাদরাসা না থাকলে দাখিল আলিম ফাজিল কামিল মাদরাসা থাকবে না। মাদরাসা শিক্ষা না থাকলে ভবিষ্যতে জানাজা সালাত পড়ানোর আলেম পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম শিক্ষার ভিত্তিমূল টিকিয়ে রাখতে হলে অবিলম্বে সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন ভাতা চালুর মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানসমূহকে জাতীয়করণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে লজ্জিত, এতবার বলার পরও এটি কার্যকর হচ্ছে না। আমি সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান করবো অতি সত্ত্বর সকল ইবতেদায়ি মাদরাসাসমূহ জাতীয়করণ করে নিন। আমরা দেশবিরোধী কোনো শক্তি নই। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে আজকের আয়োজন থেকে আহ্বান করতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন কারো বিরুদ্ধে নয়, আমাদের আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত ৪৩১২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকের বেতন-ভাতা চালুর মাধ্যমে সকল ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয় করণের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ভাতা চালু করার আদেশপত্রে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী স্বাক্ষরিত হওয়ার পরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য চরম উদ্বেগজনক এবং ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাতের শামিল।
আলোচনায় প্রধান আলোচক মুফতী সৈয়দ অছিয়র রহমান বলেন, ইমান আমল ও নীতির উন্নয়ন না হলে রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। ইবতেদায়ি মাদরাসাকে অবহেলা করলে সকল উন্নয়ন মুখ থুবরে পড়বে।
সংগঠনের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আহমেদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের সভাপতি ড. মাওলানা একেএম মাহবুবুর রহমান। আলোচনায় প্রধান আলোচক ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মুফতী সৈয়দ অছিয়র রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার ডিন প্রফেসর ড. হানিফ খান। গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন ইসলামি শিক্ষা উন্নয়নের মহাসচিব উপাধ্যক্ষ আবদুর রহমান।
ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ হতে আলোচনায় অংশ নেন, সহসভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন, মহাসচিব মো. রেজাউল হক, মাওলানা শহীদুল ইসলাম সাদ্দাম, মাওলানা ওমর ফারুক (রাঙ্গামাটি), মাওলানা রফিকুল ইসলাম (বান্দরবান), গাজীউল হক (চাঁদপুর), জহির উদ্দিন (নোয়াখালী) প্রমুখ
এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো,
১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত ৪৩১২ টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সহ তালিকা ভুক্ত সকল মাদ্রাসা অনতিবিলম্বে এমপিওভুক্তি করার দাবি জানাচ্ছে ।
২. স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন,স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতন ভাতাদি সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১৮ জরুরী বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছে।
৩. ছাত্র-ছাত্রীদের অনতিবিলম্বে উপবৃত্তি চালু করার দাবি জানাচ্ছে।
৪. স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অবকাঠামো সরকারিভাবে সংস্কার/ মেরামত/নির্মাণ জরুরী ভিত্তিতে করার দাবি জানাচ্ছে।
৫. ২০২৩ ইং সনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা টিম দিয়ে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য যে গবেষণা ও সুপারিশ করা হয়েছে তা দ্রুত
বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছে।
৬. স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা গণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় প্রাক ইবতেদায়ি স্তর চালু করতে হবে।