জার্মানিতে স্কলারশিপ পাবেন যেভাবে

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউএস (কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস) র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টিই জার্মানির। বাংলাদেশের জার্মান রাষ্ট্রদূত আরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চাকরি ক্ষেত্রে নিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করছেন। এসব সুবিধা ছাড়াও এই ইউরোপিয়ান দেশটির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখার খরচ একদম ফ্রি। স্বভাবতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য পাড়ি জমান জার্মানিতে। ইংরেজিতে প্রায় পনেরশটি প্রোগ্রামে চালু আছে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের জন্য। বাংলাদেশিদের জন্য জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়া।

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার বৃত্তি:

ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য জার্মানিতে যথেষ্ট পরিমাণে বৃত্তির সুযোগ আছে। তার মধ্যে গত এক দশক ধরে জার্মানিতে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন হচ্ছে জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস বা ডাড।

ডাড বৃত্তির দারুণ সুযোগ-সুবিধাসহ বৈচিত্রপূর্ণ বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্র থাকায় যেকোন ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমত কোর্স বেছে নিতে পারে। কোর্সের ওপর ভিত্তি করে মাস্টার্সের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর ও পিএইচডি’র মেয়াদ ৩৬ থেকে ৩৮ মাস পর্যন্ত হয়।

ছয় মাসের অধিক মেয়াদের বৃত্তির আওতায় জার্মান ভাষা শেখার জন্য ডয়েচে ইউনি-অনলাইন (ডিইউও) মডিউলগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বৃত্তিটির সবচেয়ে ভালো দিকটি হচ্ছে আবেদনের জন্য এখানে কোন দেশ ও বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই। এই বৃত্তির আওতায় স্বাস্থ্য বীমার সাথে সাথে ব্যাচেলর কোর্সে প্রতি মাসে ৭৫০ ইউরো এবং মাস্টার্সে ১০০০ ইউরো দেয়া হয়।
বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত অনুদানে আবাসন খরচও মিটে যায়, তাই বলতে গেলে কোন ধরণের বাড়তি খরচই আর প্রয়োজন হয় না। এখন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সের জন্য আবেদন গ্রহণ চলছে।

 

জার্মানিতে বৃত্তির জন্য যোগ্যতা:

স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্নাতক পাশ হতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় বছর একাডেমিক পিরিয়ড দেখানো যায়। ভাষাগত দক্ষতার ব্যাপারটি বাছাইকৃত কোর্সের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ডাড বৃত্তির জন্য আবেদন করার সর্বনিম্ন আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর ৬। টোফেল এখন গ্রহণ করা হয় না। আর জার্মান ভাষার জন্য বি-১ লেভেলের প্রশংসাপত্র প্রয়োজন। তবে জার্মান ভাষা সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। জার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে জার্মান জানা থাকলে সুবিধা হয়।

মাস্টার্সের জন্য বৃত্তির আবেদন করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- এখানে অন্যান্য প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডকুমেন্টের পাশাপাশি অন্তত দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখাতে হয়।
জার্মানিতে বৃত্তির জন্য আবেদনের সেরা উপায় হলো অনলাইনে আবেদন। আবেদনপত্র পাওয়া যায় ডাড এর ওয়েবসাইট-এ। সেখানে অনলাইনেই পুরো আবেদন পত্র পূরণ করতে হয়।

এবার ইউরোপাস স্পেসিমেন ফর্ম ডাউনলোড করে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরসহ সিভি বানাতে হয়।

তৃতীয় পর্যায়ে আসছে মোটিভেশন লেটার যেখানে আবেদনকারির কাজের অভিজ্ঞতা ও রেফারেন্সসমূহ উল্লেখ থাকে।
আবেদনের সাথে গবেষণার প্রস্তাবণা পাঠানো উত্তম কেননা অনেক ক্ষেত্রে বৃত্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার প্রস্তাবণাটি দাবি করে।
এরপর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাচেলর সম্পন্ন হয়েছে, তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত রিকমেন্ডেশন লেটার সংযুক্ত করতে হয়।
অতঃপর ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ আইএলটিএস এর স্কোরের সনদপত্র আপলোড করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার সনদপত্র যুক্ত করতে হয়।
যে বিষয়টি মনে রাখা জরুরি তা হচ্ছে, উপরোক্ত সাধারণ ডকুমেন্টগুলো ছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আরো কিছু তথ্য প্রমাণ চাইতে পারে। তাই আবেদনের সময় সতর্কতার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের আবেদনের নীতিমালা জেনে নিতে হবে।

এই নীতিমালা থেকে কিভাবে আবেদন প্রেরণ করতে হবে তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনেই সকল সফট কপি নিয়ে নেয়। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হার্ড কপিও পাঠাতে বলে যেখানে সরকারি ডাক বা ডিএইচএল-এর মাধ্যশে হার্ডকপি পাঠানো যেতে পারে।
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবহারিক জ্ঞান ও গবেষণাধর্মী কাজের জন্য সেরা জায়গা। তাই বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিমেষেই জার্মানিতে বৃত্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। জার্মান ভাষায় ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে গোথ ইন্সটিটিউট, ডিইউও’র অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে সুযোগ আছে জার্মান ভাষা শিক্ষার। এছাড়া গোথ ইন্সটিটিউটে ভাষা অনুশীলনের পাশাপাশি পাওয়া যাবে জার্মানে উচ্চশিক্ষার খুটিনাটি জানার জন্য নির্ভরযোগ্য কমিউনিটি। তাছাড়া ডাডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট জার্মানিতে বৃত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য যথেষ্ট।