আরব বিশ্বের প্রথম নারী পাইলট

সাল ১৯৩৩। বর্তমান সময়ের আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও ছিলোনা তখন। নারীদের বিভিন্ন অঙ্গনে বিচরণও এতো সহজ বিষয় ছিলোনা। আরব বিশ্বের নারীদের সামাজিক বাঁধা-বিপত্তি তো একটু বেশিই ছিলো। তবে সব বাঁধা ডিঙিয়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন লতফিয়া এলনাদি। ইতিহাস সৃষ্টি করে হাজির হয়েছিলেন আরব বিশ্বের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে।

১৯৩৩ সালে মিশরে বিমান পরিবহন ব্যাপারটিই তখন প্রায় নতুন, ছিলোনা একটি জাতীয় বিমানবন্দরও। ঠিক সেই সময়টাতে সাহস দেখিয়েছিলেন এই নারী। তখন মিশরের এই নারী বিমান নিয়ে প্রথম আকাশে উড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।

জানা গেছে, লতফিয়া এলনাদির জন্ম হয়েছিল মিসরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা সরকারি চাকরি করতেন। লতফিয়ার আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ছিলো ছোটোবেলা থেকেই৷ লতফিয়ার পাইলট হওয়ার সময়টাতে আলমাজা নামে ছোট একটা বিমানবন্দর ছিল মিশরে। যা ছিলো কাঠের একটা ছোট্ট কুটিরের মতো। আর সেখানে পাইলটদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য দুটি বেঞ্চ ছিল।

সেখানে যেসব পাইলট এবং প্রশিক্ষক কাজ করতো, লতফিয়া তাদের কাজে সাহায্য করতেন। কাজ করে যা আয় করতেন, সেটা দিয়ে তার বিমান চালনা প্রশিক্ষণের খরচ যোগাতেন। পাইলট হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন প্রায় ৩০ জন পুরুষের মধ্যে লতফিয়া ছিলেন একমাত্র নারী। লতফিয়া আরবি ছাড়াও ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষা বলতে পারতেন।

তবে আশ্চর্যজনক মনে হলেও সত্যি যে আরব বিশ্বের এই প্রথম নারী পাইলট তার জীবনে কখনো পেশাদার পাইলট হননি। তার কাছে বিষয়টি ছিলো কেবলই নেশা। তবে পেশাগত দায়িত্ব হোক কিংবা নেশা তার আকাশে ওড়ার স্বপ্ন থেমে গিয়েছিলো ৫ বছরেই।

পাইলট হিসেবে লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছর পরেই তার এই বৈমানিক জীবন এক দুর্ঘটনায় থমকে যায়। কোনো এক দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি৷ আর এর পর থেকেই আর কখনো পাইলট হিসেবে দেখা মেলেনি তার৷

এরপর ১৯৬০-এর দশকে লতফিয়া এলনাদি সুইজারল্যান্ডে চলে যান তার মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য। তবে শোনা যায় সে দুর্ঘটনায় পাইলট হিসেবে তার যাত্রা থেমে গেলেও তা নিয়ে খুব একটা দুঃখবোধ ছিলোনা লতফিয়ার মধ্যে। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসারত অবস্থায় ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে ৯৫ বছর বয়সে মারা যান আরব বিশ্বের প্রথম এই নারী পাইলট৷