পুরোনো আমেজে টিএসসির ইফতার
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। দিনভর সিয়াম সাধনার পর নগর জীবনের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে সন্ধ্যায় ইফতার করতে অনেকেই ছুটে আসেন এখানে। ইফতার সামগ্রী এবং পত্রিকার পাতা হাতে নিয়ে তরুণরা জড়ো হতে থাকেন টিএসসির ভেতরের সবুজ মাঠটিতে। ছোট-বড় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পত্রিকা বিছিয়ে চলে ইফতারির আয়োজন।
করোনার কারণে গত দুই বছর এমন চিত্র দেখা না গেলেও এবার দেখা যাচ্ছে সেই পুরনো চিত্র। রোববার (৩ এপ্রিল) প্রথম রমজানে টিএসসিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসতেই ছাত্র-ছাত্রীদের দলে দলে আসতে দেখা যায়। প্রত্যেকের হাতে ছিল খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল এবং বসার জন্য খবরের কাগজ। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ইফতারে মেতে ওঠতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। কোনোটিতে তিনজন আবার কোনোটিতে দশজন। ইফতারের পূর্বে সামনে রাখা হয় বাহারি রকমের ইফতার সামগ্রী।
তাদের অধিকাংশের ইফতারের মেন্যুতে ছিল ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, পাকোড়া, চিকেন, জিলাপি, খেজুর, লেবু শরবত ইত্যাদি। ছিল হরেক রকমের ফলও। এখানে ইফতার করতে আসা বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী।
তারা জানান, ঢাবি বাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এখানে আসেন। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষও আসেন তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। টিএসসিকেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও এলাকাভিত্তিক সংগঠনও এখানে ইফতার পার্টির আয়োজন করে।
বন্ধুদের নিয়ে টিএসসিতে ইফতার করতে আসা সমাজবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসলাম আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম বছর টিএসসিতে খুব আনন্দের সাথে বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করেছিলাম। গত দুই বছর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ইফতারি অনেক মিস করেছি। এই বছর তাই প্রথম দিনেই বন্ধুদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছি। এখানে ইফতার করার মজাই আলাদা।
কথা হয় ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনার সঙ্গে। তিনি বলেন, ইফতার আয়োজনে টিএসসি আমার প্রথম পছন্দ। এখানে বন্ধুদের সাথে ইফতারির মজাই আলাদা। আবারও এখানে ইফতার করতে পেরে ভালো লাগা কাজ করছে।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমদাদুল হক বলেন, এটা আমার জন্য প্রথম অনুভূতি। এর আগে খবরের পাতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিএসসির ইফতারের কথা শুনতাম। আজ তাই বন্ধুদের কাছ থেকে অফার পেয়ে দেরি করিনি।
শুধু টিএসসি নয় আবাসিক হলগুলোর মাঠ, বিভিন্ন অডিটোরিয়াম, সবুজ চত্বর, মল চত্বর, সিনেট ভবন প্রাঙ্গণ, বটতলা, ক্যাফেটেরিয়া, হাকিম চত্বর, কার্জনের মাঠসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে। সবার উদ্দেশ্য সারা দিনের সিয়াম সাধনার পর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আনন্দে ইফতার করা।