ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা, উত্তপ্ত ক্যাম্পাস
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান অন্তরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ঘটনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকালে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী রাহাতের সাথে অন্তরের দ্বন্দ্ব ছিল। সম্প্রতি সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে রাহাত স্থানীয়দের যোগসাজসে গত ৩০ অক্টোবর বিরুলিয়ার দত্তপাড়া থেকে অন্তরকে তুলে নিয়ে যায়। তবে অন্তরকে তুলে নেওয়ার সময় রাহাত ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পরে স্থানীয়রা অন্তরকে বিরুলিয়া ব্রিজের নিচে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে খাগান বাজারের কাছাকাছি ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে তার পরিবারের জিম্মায় ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অন্তর। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু হয়।
নিহত অন্তর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে।
এদিকে শুক্রবার অন্তরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরবর্তীতে আকরান বাজারে স্থানীয়দের শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, অন্তরের সাথে এক শিক্ষার্থীর ঝামেলা চলছিল। এর জের ধরে গত ৩০ অক্টোবর তাকে দত্তপাড়া থেকে তুলে নিয়ে বেদম প্রহার করা হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, অন্তর নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিতে আজ সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কোনো খোঁজ নেই। আমরা তার পদত্যাগ চাই। আগামীকাল রোববার অন্তরের গায়েবানা জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ বিষয়ক পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, বহিরাগতদের প্রহারে আমরা আমাদের পরিবারের এক সদস্যকে হারিয়েছি। এই ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, অন্তরের মৃত্যুর ঘটনায় আগামীকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। আমরা অন্তরের পরিবারকে সবদিক থেকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দিদার হোসেন জানান, শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে আদালতে ১৬৪ ধরায় জবাবন্দিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি আরও বলেন, মামলায় এজহারে ৬ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় আসামি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত। তার বাবার নাম মনসুর। আমরা তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।