বিশ্বসেরা এমআইটি: কেন? কিভাবে?

পরিচিতিঃ ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্‌স অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত একটি বেসরকারি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়, যেটাকে পৃথিবীর সবথেকে মর্যাদাপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত, এমআইটি ইউরোপীয় পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল গ্রহণ করে এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পরীক্ষাগার কর্মসূচীর উপর জোর দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময় গবেষকরা কম্পিউটার, রাডার এবং [নিষ্ক্রিয় নির্দেশিকা ব্যবস্থার উপর কাজ করেন। জেমস কিলান-এর অধীনে যুদ্ধোত্তর প্রতিরক্ষা গবেষণা এর আওতায় অনুষদ এবং ক্যাম্পাস দ্রুত সম্প্রসারণে অবদান রাখে। ১৯১৬ সালে বর্তমান ১৬৮-একর (৬৮.০ হেক্টর) ক্যাম্পাস চালু করা হয় এবং চার্লস নদী অববাহিকার উত্তর তীর বরাবর ১ মাইল (১.৬ কিমি) প্রসারিত করা হয়।

নোবেল প্রাইজ ও এমআইটিঃ ৪র্থ সর্বোচ্চ নোবেল বিজয়ী বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি। ভারতীয় বাঙালি অর্থনীতিবীদ অমর্ত্য সেনও সেখানকার শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত ৯৮জন শিক্ষার্থী নোবেল পেয়েছেন যাদের মধ্যে ১১জন বর্তমানে ফ্যাকাল্টি মেম্বার।

এমআইটিতে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যঃ এমআইটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি দীর্ঘসময় ধরে নিতে হয়। কারণ, ওরা দেখতে চায় পড়ালেখায় কে কতটা ভালো, একজন আবেদনকারী মানুষ হিসেবে কেমন, তার কোনো বিষয়ে আগ্রহ আছে কি না, সেই আগ্রহ থেকে সে কী কী করেছে, সে কীভাবে সংকট সামাল দিয়েছে ইত্যাদি। কোনো ছাত্রের আগ্রহ থাকতে পারে গণিতে, খেলাধূলায়, সংগীতে, জনসেবায়, থিয়েটারে— আগ্রহ থাকতে পারে যে কোনো কিছুতেই। আর এই আগ্রহ থাকার ব্যাপারটি শুধু বললেই হবে না, দেখাতে হবে নিজের আবেদনপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে, শিক্ষকদের সুপারিশপত্র এবং সাক্ষাৎকারে জীবনের ছোট ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে।

এমআইটির আবেদনপত্র অনলাইনে পাওয়া যায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসেই; জমা দিতে হয় যে বছর এমআইটিতে ক্লাস শুরু হবে, সেই বছরের জানুয়ারি মাসেই। কাজেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমআইটিতে ক্লাস শুরু করতে চাইলে, আপনাকে কাজ শুরু করতে হবে ২০২১ সালের অক্টোবর বা নভেম্বর থেকে। আবেদন করার শেষ সময় থাকে প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। অর্থাৎ আবেদন করার শেষ সময় ২০২২ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যই দিয়ে ফেলতে হবে স্যাট-১ ও ২।

আবেদন করার পর আপনি এমআইটি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত বাছাইয়ের তথ্য জানতে পারবেন মার্চের ভেতরেই। টোফেলের মতো ভাষা পরীক্ষা দেওয়াটা এমআইটির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। তবে দিয়ে ফেললে ক্ষতি নেই, অনেক সময় ভিসার আবেদন করলে দূতাবাস টোফেলের স্কোর দেখতে চায়। অনেকেই জানতে চান, এই ধরনের পরীক্ষাগুলোয় ন্যূনতম কত নম্বর পেতে হবে? নাজিয়া বলেন, আসলে এমআইটির কোনো ন্যূনতম চাওয়া নেই। তবে যেহেতু বাংলাদেশ থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আবেদন করেন তাই স্কোর ভালো হলে সেটি আবেদনকারীর জন্যই ভালো। এমআইটিতে যারা ভর্তি হয়, তাদের স্কোর কেমন, এর একটা হিসাব পাওয়া যাবে এমআইটির অ্যাডমিশন ওয়েবসাইট ‘Standardized Testing’-এ।

এমআইটির ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ‘মাই এমআইটি’ অ্যাকাউন্ট খুললেই পাওয়া যাবে আবেদনপত্র। আবেদনপত্রে বড় কোনো রচনা থাকে না ঠিকই, তবে থাকে ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন। যেমন- নির্মল আনন্দের জন্য আপনি কী করেন? জীবনে ব্যর্থতার সময়গুলো আপনি কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন ইত্যাদি। আর সুপারিশপত্র নিতে হয় স্কুল-কলেজের তিনজন শিক্ষকের কাছ থেকে। যাঁরা আপনাকে ভালো করে চেনেন, আপনার জীবনের ছোটখাটো ঘটনাগুলো যাঁরা বলতে পারবেন, তাঁদেরই অনুরোধ করুন, আপনার জন্য সুপারিশপত্র লিখতে। তাঁদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করে বলুন, আপনার সম্পর্কে কী কী তাঁরা লিখতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে, সেই বিষয় নিয়ে চর্চা করুন, ছাড়িয়ে যান নিজেকে।

এমআইটিতে প্রতিবছর ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বৃত্তি এবং আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে হয়। নির্বাচিত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয় মার্চে এবং বৃত্তির ধরনটি জানানো হয় এপ্রিল মাসে। সবাই পূর্ণ বৃত্তি পান না, যারা পূর্ণ বৃ্ত্তি পান না তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি চাকরি এবং খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ আছে এখানে।

 এটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য “নিড ব্লাইন্ড” এবং “ফুল নিড” এডমিশন পলিসি মেনে চলে। নিড ব্লাইন্ড হলো এডমিশন ক্রাইটেরিয়ায় আপনার অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে ধরা হবেনা। অর্থাৎ, আপনার ফ্যামিলির বাৎসরিক ইনকাম আপনার এমআইটি তে পড়ার ক্ষেত্রে বাধা হবে না। শুধু তাই নয়, “ফুল নিড” পলিসিতে এমআইটি তে ভর্তি হওয়ার পর আপনার ফ্যামিলি যদি আপনার পড়াশোনার ভারবহন করতে না পারে, সেটার ভার বহন করবে এমআইটি।

এবার আসি এমআইটি তে ভর্তির যোগ্যতা নিয়ে। এমআইটি একটা ছাত্রের প্রোফাইল খুব যত্ন নিয়ে দেখে। এবং বেছে বেছে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেয়।

এখন জেনে নিই সাধারণত এমআইটি তে আন্ডারগ্রেডে ভর্তির ক্রাইটেরিয়া গুলো কি কি:

১. জিপিএ
এমআইটি তে ভর্তির জন্য জিপিএ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা যারা এমআইটি তে ভর্তি হতে চায় তাদের উচিত অন্তত বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ৯০+ মার্কস রাখা। সবমিলিয়ে গোল্ডেন পেলে নিজেকে অনেক এগিয়ে রাখতে পারবে। এজন্য বছরের প্রথম থেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করার অভ্যাস করতে হবে।

২. এসএটি
এমআইটি তে মিনিমাম এসএটি রিকোয়ারমেন্ট হলো ১৫১০, যেখানে রিডিং ও রাইটিং পার্টে ৭৩০ এবং ম্যাথ পার্টে ৭৮০। তবে মনে রাখতে হবে এমআইটি তে ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য ১৫১০ পাওয়াই যথেষ্ট নয়, আমি মনে করি কমপক্ষে ১৫৭০ পেলে সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আবার অনেকে এসএটির বদলে এসিটি দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে সেটাও চেষ্টা করতে পারেন। এসএসসির পর থেকে কিছু বই কিনে এসএটির জন্য প্রস্তুতি শুরু করুন।