ব্যক্তিত্বে অতুলনীয় ,আদর্শে অনুকরনীয়!
আশিকুর রহমান
স্বাধীনতার স্বপক্ষের সমস্ত মানুষের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস হলো, ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ অনেকেই হতে পারেন, তবে নেতার মতো নেতা ছিলেন কেবল একজনই। যার আঙ্গুলি হেলনে আমরা এক মোহনায় মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছি ইতিহাস,সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের। তিনি বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা পরবর্তী স্বাধীন বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে দ্যর্থহীন কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন-‘ছাত্রলীগের ইতিহাসই বাঙালির ইতিহাস। আর যুগে যুগে এই ছাত্রলীগই সময়ের প্রয়োজনে জন্ম দিয়েছে কালের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমি সেই ইতিহাসে যাব না, কেননা তাদের যথাযোগ্য মূল্যায়ন আমরা কখনোই যথার্থরূপে করতে পারবো কি না তা সন্দেহের বিষয় হিসেবেই রয়ে যাবে।কিন্তু সময়ের আপেক্ষিকতায় যুগের পরিক্রমায় ছাত্রলীগকেও বদলাতে হয়।আর সময়ের সাথে সাথে এ বদলানো পরিবর্তনের খেলায়,কখনো কখনো অনুপ্রবেশকারীদের হাত ধরে ছাত্রলীগের আদর্শের খেলাপ ও ঘটে।সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নাম বারবার যখন সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে পত্রিকার শিরোনামে উঠে এসেছিলো,সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের সিড়ি থেকে অন্তঃকলহে বারবার লিপ্ত হচ্ছিলো,তখনই দেখা মেলে একজন ত্রানকর্তার। আজকে আমার লেখা এমন একজন সাবেক ছাত্রনেতা নিয়ে যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ক্লীন ইমেজের পতাকা হাতে সফল ছাত্রলীগনেতা থেকে ছাত্রনেতায় পরিনত হয়েছেন জাতির জনকের দেখানো পথের পথিক হয়ে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর হৃদয়ে স্থান করা নাম- ইকবাল হোসেন টিপু। স্কুল জীবন থেকে স্থানীয় ছাত্ররাজনীতি,কলেজ জীবনে ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করা ইকবাল হোসেন টিপু মাধ্যমিক শেষ করার পরপরেই চট্টগ্রাম মহানগর বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ছিলেন।মাধ্যমিকের পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখনকার মত তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতির চর্চা এতোটা সহজ ছিলো না।মৌলবাদী,জামাত-বিএনপির দোসর শিবিরের ভয়াবহতায় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিলো মাদ্রাসা,চলতো ছাত্রলীগ সহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর দমন নিপীড়ন।তখনকার আমলে আজকের মতো এতো ছাত্রলীগ কর্মীর আধিক্যও ছিলো না তখন।শিবির বিরোধী আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন চসিক মেয়র আ.জ.ম নাসির উদ্দীনের নির্দেশনা মোতাবেক। ২০১২ সালের ০৮ই ফেব্রুয়ারির শিবির-ছাত্রলীগ লড়াইয়ে এবং ২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারি মৌলবাদ গোষ্ঠী জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সম্মুখ সাড়িতে দেখা যায় ইকবাল হোসেন টিপুকে।পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন স্বীয় যোগ্যতায়।ইকবাল হোসেন টিপু যে এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে মুজিবের আদর্শ ধারন করে ছাত্রলীগের ঝান্ডা ওড়াতে পারবেন তা তখনই বুঝেছিলেন আ.জ.ম নাসির উদ্দীন । তাইতো দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি না থাকাকালীন সময় হাতেগোনা যে কজন ছাত্রনেতাকে তিনি নিজে দায়িত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দেবার তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন টিপু।তখন থেকেই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছিলেন একনিষ্ঠভাবে।যার ফলে কমিটি আসার পর হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এর পরের গল্পটা আরো ভিন্ন।ছাত্রলীগ নেতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের নেতা হয়ে ওঠার কাজটা এতোটাও সহজ ছিলো।সাধারন শিক্ষার্থীদের যেকোন যৌক্তিক দাবীতে কাধে কাধ মিলিয়ে তাদের সাথে স্লোগান করা,তাদের সাথে বুক মিলিয়ে চলার কাজটা হয়তো তিনি ইকবাল হোসেন টিপু বলেই করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
করোনাকালে তিনি সাধারন মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন উদার চিত্তের হৃদয় দিয়ে।খেটে খাওয়া, দিন মজুর মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে গিয়েছেন সহায়তা নিয়ে।হাসি ফুটিয়েছেন অন্তত ৬০০ পরিবারের মুখে।যখনই ক্রান্তিকাল,তখনই ইকবাল হোসেন টিপু-কথাটা বললে মোটেও বাড়িয়ে কিছু বলা হবে না।করোনাকালে লকডাউনে যখন কৃষকের পাকা ধান শ্রমিকের অভানে নষ্ট হওয়ার উপক্রম,তখন তার বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে কেটে দিয়েছেন কৃষকের পাকা ধান।দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছে কৃষক,হাসি ফুটেছে সোনার বাংলায়।নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনায় করেছেন স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি। এভাবে যখনই দূর্যোগ নেমে এসেছে,তখনই ইকবাল হোসেন টিপু ছিলেন সম্মুখসাড়িতে।একেবারে সামনে থেকে পরিষ্কার ক্যাম্পাস,নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার মত আন্দোলনেও ছিলেন নেতৃত্বে।সর্বশেষ সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি’র খবর শুনে ছুটে গিয়েছেন চমেকে।ঘুম উজাড় করে সারারাত -দিন পালন করেছেন স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব।এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আহবান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।ছাত্রলীগের ছেলেরাও ছুটে গিয়েছেন,কেউ রক্ত দিয়ে,কেউ স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে,অনেকে আবার অর্থ সহায়তার মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধদের পাশে ছিলেন।
ছাত্রলীগ দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ সংগঠন।এখানে খারাপ-ভালো সব শ্রেনীর ছাত্রই থাকবে।চাঁদও যেমন কলঙ্কমুক্ত নয়,তেমনি ছাত্রলীগও ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নয়।ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কে বা কারা খায়,আপাতত সে আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না।ছাত্রলীগের নাম যাদের জন্য উজ্জ্বল হয়,যাদের নিরলস পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এখনো বাংলার স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষজন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখে, আলোকবর্তিকা হাতে যাদের আবির্ভাব ঘটে উজ্জল নক্ষত্র হয়ে,ইকবাল হোসেন টিপু তাদের মধ্যে একজন।
লেখকঃ আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।