‘ঢাবিতেও ছাত্রীদের হিজাব নিয়ে কথা শুনতে হয়’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের মেয়েদের জন্য সংহতি প্রকাশ করছি তখন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আমাদের স্যার -ম্যাডামদের কাছ থেকে হিজাব নিয়ে কথা শুনতে হয়। যারা হিজাব পরেন তারা পিছিয়ে পড়া, পক্ষপাতদুষ্ট এসব বলা হয়। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশেও যে যার ইচ্ছা মতো পোশাক পরবে। এটাতে কোন বাঁধা দেয়া চলবে না। এখন যে শিক্ষক এটা করবে আমরা তা নথিভুক্ত করে রাখবো।

আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংহতি সমাবেশ থেকে এসব কথা বলেণ তিনি। ভারতের কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে চলা আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সংহতি সমাবেশে জয়দেব চন্দ্র রায় নামে একজন বলেন, এটার জন্য আসলেই আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে খুব লজ্জা বোধ করছি। দেখেন এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে এবং সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে আমাদের কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী স্লোগান দিচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলছে। বোরকা পরা একটা ভালো জিনিস। আমি বোরকার পক্ষে। যেটা পরলে আমাদের মা বোন সুরক্ষিত থাকবে। আমি তো মনে করি আমার মা কিংবা বোন যদি বোরকা পরতে চায় পরতে পারে। এটাতে তো কাউকে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু সেখানে এরকম হবে এটা তো আমার জন্য লজ্জার। এটা যে রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

জয়দেব আরো বলেন, বিভিন্ন সময় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে যাতে এই ভুল কাজগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া না হয়।

সায়দা জান্নাত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী হিজাব পরা একজন ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। এই বিষয়ে যখন নিষেধাজ্ঞা আসে তখন চুপ করে থাকার সময় থাকে না। ছেলে ও মেয়েরা কি পরবে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না এবং এর একটি সুরাহা হবে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, মানুষ কোন পোশাক পরবে আর কোন পোশাক পরবে না সেটা তার নিজস্ব বিষয়। মুসলিম পরিচয় দেখে এভাবে পুরো উপমহাদেশে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদ সন্ত্রাস তৈরি করা এটা আমরা বর্তমান ভারত সরকারের একটি হিন্দুত্ববাদী চাল হিসেবে দেখছি। হিজাব যে শুধু মুসলিম নারীরা পরে তা নয়। আমরা যদি খ্রিষ্টান সেবিকাদের দেখি তারাও হিজাব পরে। অনেক হিন্দু বিধবারাও মাথা ঢাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এভাবে বাধা নিষেধ সৃষ্টি করা অত্যন্ত সন্ত্রাসমূলক কাজ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা তাসনিম বলেন, হিজাব পড়াকে যখনি আমি আফগানি ও তালেবানি পোশাকের সাথে তুলনা করব তখন এটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। আমরা যে অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছি সবার মনে এটাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা। আমার দেশে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি যখন থাকবে তখন আমি বোরকা পরব, আমার বান্ধবী সিঁদুর-শাখা পরবে,কেউ সেলাওয়ার কামিজ পরবে।