ক্রান্তিকালে সিলেট: মানবতা তুমি দীর্ঘজীবী হও

আবদুল ওয়াহেদ

অবসরে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে মানুষ যেখানে ছুটে যায়,সেই শাহজালালের (রঃ) পূণ্য ভূমি আজ ভালো নেই।মাস গড়াতেই দুই দু’বার বন্যার কাল সলীলে ডুবে গেছে সব সাদা পাথর। ভেঙে গেছে বসতবাড়ি। দুমড়ে মুচড়ে গেছে মানুষের স্বপ্ন।স্থবির হয়ে গেছে জনজীবন।আলোর প্রদীপ যদিও নিভে চারিদিকে বিরাজ করছে ঘোর অন্ধকার,কোটি মানুষের পেটে ক্ষুধার মানিক আর নিভে নেই।দু’মোটো আহারের অভাবে যেখানে কোটি প্রাণ যায় যায় সেখানেই ভেসে আসে দ্রব্যমূল্যের দশগুণ বাড়তি দামের খবর।সন্তান প্রসবের বেদনায় যেখানে কাতর একজন মা সেখানে পাঁচশো টাকার নৌকা ভাড়া পঞ্চাশ হাজার। জনজীবন যেখানে বিপন্ন সেসময় মিড়িয়া পাড়া দখলে নিয়েছে মৌসুমি,জায়েদ খান।ক্ষুধার্ত কুকুর যেখানে ধেয়ে আসে জ্যান্ত পশুশাবক ভক্ষণে সেখানেই বিতর্ক চলে-বন্যার জন্য কে দ্বায়ী;সরকার না জনগণ?

মানবতার আর্তচিৎকার যদিও শেষমেশ কিছু মানুষের কর্ণকুহর ভেদ করেছে,জনতার কাছে বাড়িয়েছে সাহায্যের হাত,সেখানেই কিছু মানুষ বলছে-ভিক্ষুকদের মুখে থুথু।স্রষ্টার অশেষ কৃপায় তবুও থেমে যায়নি মানবতা।একের পর এক ব্যক্তি,সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ। মানুষ হয়তো মাদার তেরেসার সাথে সুর মেলাতে চায়-‘যে জীবন অপরের জন্য না সেটি কোন জীবন না’।জাতির ক্রান্তিলগ্নে জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে সুন্দর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন এত বড় দ্বায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তাদের কদর করতেই হয়।ড.মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন-‘যে দেশে গুণের কদর নেই,সে দেশে গুণীজন জন্মায় না।’কিন্তু ভালোবাসার এই প্রসারিত বাহু কারো একার কিংবা দলের বললে অত্যুক্তি হবে। রাজনৈতিক,ধর্মীয়,সামাজিক নানান পেশার মানুষের এগিয়ে আসার পেছনে মূল শক্তি কোটি জনতা।জনগণ যেনো প্রমাণ করতে চায়-‘দশে মিলে করি কাজ,হারি যেতে নাহি লাজ।’সুতরাং এটাকে ব্যক্তি কিংবা দলীয়করণ না করে জাতীয়ভাবে দেখা উচিত।দেশের আরো বিশিষ্টজন,রাজনীতিকদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে আরো বেশি হারে এগিয়ে আসা দরকার।

একটি রাষ্ট্রের সব দ্বায় দায়িত্ব সরকারের একার নয়।তবে করোনা মহামারী থেকে শুরু করে জাতির নানান ক্রান্তিকালে জনগণের পালিত দায়িত্ব নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ কিংবা সহায়তা প্রদান যেমনি বারংবার সম্ভব নয় তেমনি এটা নয় কোন স্থায়ী সমাধান। সুতরাং সরকারের উচিত গঠণমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে এসব পরিস্থিতির উৎস চিহ্নিতকরণ পূর্বক স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা। সরকার চাইলে যেমন বাস্তবায়ন হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু তেমনি এই পরিপাশ্বিক সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণও অসম্ভব কিছু না।দরকার সকলেরই একটি স্বদিচ্ছা। সরকার ও জনগণের যৌথ সহযোগিতায় সিলেট,সুনামগঞ্জের এই খারাপ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান হোক।ত্রাণের পাশাপাশি পূনর্বাসন সহযোগিতার জন্যেও সকলে এগিয়ে আসুক।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন-হে মুমিনগণ!আমি তোমাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করো সেদিন আসার আগে যেদিন কোন বেচাকেনা,বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবেনা-(সুরা বাকারা-২৫৪)।
রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন-তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনিও তোমাদের দয়া করবেন।(আবু দাউদ-৪৯৪১)।
সর্বোপরি বলি,মানবতা!তুমি দীর্ঘজীবী হও।

লেখক: আবদুল ওয়াহেদ।
শিক্ষার্থী: সমাজতত্ত্ব বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।